প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়

সংক্ষিপ্ত পরিচয় :-
কলকাতা-আধারিত ভারত প্রসিদ্ধ হীরার ব্যবসায়ী, তৎকালীন সিন্ধ হায়দ্রাবাদের মূল অধিবাসী একাধারে ঈশ্বরের পরম ভক্ত ছিলেন সকলের বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন দাদা লেখরাজ। গরীব থেকে রাজা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রের মনুষ্য জীবনের চরম অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধ হায়দ্রাবাদের দাদা লেখরাজ। ১৯৩৬ সালে তিনি একের পর এক বিষ্ণু চতুর্ভূজ, কলিযুগের মহাবিনাশ, স্বর্গ দুনিয়ার মনোরম দৃশ্য ক্রমাগত স্বাক্ষাৎকার করেন। লোকমুখেই এই প্রতিষ্ঠানের নাম পড়ে গেল ‘ওম্ মন্ডলী’। হাওয়ার গতিতে এর নাম সারা সিন্ধ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। চারিদিকে স্বাক্ষাৎকারের ধুম পড়ে যায়। ১৯৪২ সালে এই প্রতিষ্ঠান বর্তমান করাচীতে স্থানান্তরিত হয়। কিছুদিন পরে বিধিপূর্বক এর নাম রাখা হয় প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়।
ভারত বিভক্ত হওয়ার পরেও পাকিস্তানের মানুষদের অনুরোধে তারা সেখানেই থেকে যান। কিন্তু ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় তারা ১৯৫০ সালে স্বাধীন ভারতে ফিরে আসে এবং রাজস্থানের মনোরম আরাবল্লী পর্বতের কোলে স্থাপিত হয় সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মুখ্যালয়। তার পরেই প্রারম্ভকালে দিল্লী, বোম্বাই, মাদ্রাস (চেন্নাই) আর কানপুর ভারতের এই ৪ টি শহরে সহজ রাজযোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এরপরে সেবাকার্য তীব্রগতিতে এগিয়ে চলে এবং ভারত ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় এবং এই প্রতিষ্ঠান তার পাখা সারা পৃথিবীতে প্রসারিত করে মানুষকে ঈশ্বর মিলন ও সুখ-শান্তি-প্রেম আনন্দের অনুভূতি করার আসল উপায় বলে দেয়। বর্তমান সময় পৃথিবীর ১৪২টিরও বেশী দেশে এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিস্তৃত হয়েছে। সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘ ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কার্যপদ্ধতিকে পরিলক্ষিত করে এই প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নরকম মহত্বপূর্ণ বিভাগে সংলগ্ন করেছে, যেমন –
১) ১৯৮০ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে জনতথ্য বিভাগে (DPI-Department of Public Information) সংলগ্ন করা হয়।
২) ১৯৮৩ সালে এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয় সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগে (ECOSOC-Economic & Social Council) সংযুক্ত হয়।
৩) ১৯৮৭ সালে এই সংগঠন সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক শিশুদের জরুরী তহবিল বিভাগে (UNICEF-United Nations International Children Emergency Fund) পরামর্শদাতার পদ প্রাপ্ত করে।
৪) ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গঠনমূলক সম্মেলন (UNFCCC-United Nations Framework Convention on Climate Change)-এই ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
৫) ২০১৪ সালে এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়কে সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ প্রকল্পে (UNEP-United Nations Environment Project) পর্যবেক্ষক পদে নিযুক্ত করা হয়।
৬) ২০১৪ সালে এই সংগঠন গ্রাম্য মানুষের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা (ERP- Education for Rural People) বিভাগে প্রমুখ সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে।
৭) ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে খাদ্য ও কৃষি সংগঠন (FAO-Food & Agriculture Organisation) বিভাগে প্রমুখ সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয় দ্বারা সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রের মানুষের বিশেষ সেবার জন্য ২০ টি সেবা প্রভাগের রচনা করেছে : ১) প্রশাসক প্রভাগ ২) কলা ও সংস্কৃতি প্রভাগ ৩) ব্যবসা ও উদ্যোগ প্রভাগ ৪) শিক্ষা প্রভাগ ৫) আই. টি. প্রভাগ ৬) আইনজ্ঞ ও আইন প্রভাগ ৭) মিডিয়া প্রভাগ ৮) চিকিৎসা প্রভাগ ৯) রাজনীতিজ্ঞ প্রভাগ ১০) ধর্মীয় প্রভাগ ১১) গ্রামীণ সেবা প্রভাগ ১২) সুরক্ষা সেবা প্রভাগ ১৩) বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভাগ ১৪) শিপিং ও বিমানচালনা প্রভাগ ১৫) সমাজ সেবা প্রভাগ ১৬) স্পার্ক (SPARC- Spiritual Application Research Centre) আধ্যাত্মিক প্রয়োগ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রভাগ ১৭) খেলাধুলা প্রভাগ ১৮) পরিবহন ও ভ্রমণ প্রভাগ ১৯) মহিলা প্রভাগ ২০) যুবা প্রভাগ।
বিশ্ব-শান্তির মতো মহান কর্তব্যের জন্য এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয় সাতটি জাতীয় শান্তি পুরষ্কার এবং সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘ দ্বারা আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছে।
মানব মনের শান্তি এবং বিশ্ব-শান্তি, পারস্পরিক প্রেম, ভ্রাতৃত্ব এবং একটি মানবীয় মূল্যনিষ্ঠ সমাজ গঠন করাই এই ঈশ্বরীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য।